Friday, October 13, 2017

রামপ্রসাদের সাধনপীঠ


রামপ্রসাদের সাধনপীঠ সম্পর্কে আলোচনা করার আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত। প্রসঙ্গত সাবর্ণ বংশের লক্ষ্মীকান্তের প্রপৌত্র পঁচিশতম পুরুষ রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরী(জন্ম ১৬৫২ খ্রিঃ) পরমসিদ্ধ তান্ত্রিক সাধক ছিলেন। রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরী কুমারহট্ট হাভেলিশহরে( হালিশহরে) সাধনপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সাধনপীঠ প্রতিষ্ঠা করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এরজন্য পঞ্চবট, পঞ্চমুণ্ডের আসন স্থাপন করতে হয়। কোটিবার মহাবিদ্যার বীজমন্ত্র জপ করা, কোটিবার হোমযজ্ঞ সম্পন্ন করা হলেই তবে আসনটি পীঠাসনে পরিণত হয়। শাক্ত তান্ত্রিক রামকৃষ্ণ এই নিয়মেই সিদ্ধপীঠ রচনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। তাঁর নাম অনুসারে সিদ্ধপীঠটি "রামকৃষ্ণ মণ্ডপ" নামে আখ্যা লাভ করে।
Ramprasad sen png photo
 কুমারহট্ট হালিশহরে এরপর আরেকজন মহাসাধকের জন্ম হয়। তিনি প্রখ্যাত সাধক রামপ্রসাদ সেন (জন্ম ১৭২০)। রামপ্রসাদ জন্মসূত্রে বৈদ্য, শাক্ত কালীভক্ত ছিলেন। সঙ্গীতের কথা ও সুরের মাধ্যমে কালীমাতার সঙ্গে যেন সংলাপ করতেন। রামপ্রসাদের সাধনা ও কবিত্ব মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ায় হালিশহরের সাবর্ণ বংশের জমিদাররা ১৭৫৪ থেকে ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রামপ্রসাদকে কৃষিযোগ্য জমি, বাস্তুভিটাসহ রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর সিদ্ধপীঠ দান করেন। ক) সাবর্ণ রায় চৌধুরী বংশীয় দর্পনারায়ণ, শ্রীরাম রায়, কালীচরণ রায়- তিনজনে একত্রে মোট ৮ বিঘা জমিদান করলেন। তারিখ ২এপ্রিল, ১৭৫৪ খ) হালিশহরের সাধক রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ সুভদ্রাদেবীর অপুত্রক থাকায় ' সবৃক্ষবাটি আন্দাজ ১বিঘা জমি রামপ্রসাদকে বসবাস ও সাধনার জন্য দান করেন। তারিখ- ১৫ ই এপ্রিল, ১৭৫৮ গ) সাবর্ণ রায় চৌধুরী বংশীয় দর্পনারায়ণ এককভাবে ২বিঘা জমি দান করেছিলেন। তারিখ- ১লা জুলাই, ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে অনেকের মতে সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবার থেকেই তাকে "কবিরঞ্জন" উপাধি প্রদান করা হয়। সাধক রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ সুভদ্রাদেবী কর্তৃক তাঁর শ্বশুরের নির্মিত "রামকৃষ্ণধাম" রামপ্রসাদ সেন দানস্বরূপ ১৫ই এপ্রিল,১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে পান। কালীমাতা রামপ্রসাদের পত্নীকে উক্ত সাধনপীঠে সাধনা করতে বলেন।সেই সাধনায় রামপ্রসাদ সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। উক্তধামের সেই পঞ্চবটীতলা এবং পঞ্চমুণ্ডাসন আজও বর্তমান। রামপ্রসাদ সেনের তিরোধানের পরে প্রায় ষাটবছর জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। পরে উদ্দোগ নিয়ে স্থানটিকে দর্শনযোগ্য তীর্থস্থানে পরিণত করা হয়েছে।


সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের উল্লেখযোগ্য তন্ত্রসাধক রামকৃষ্ণ রায় চৌধুরীর সাধন প্রেরণা এবং তাঁর নির্মিত পঞ্চবটীতলা ও পঞ্চমুণ্ডাসনের কথা সাধক রামপ্রসাদ সেন তাঁর "বিদ্যাসুন্দর" কাব্যে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে এই মহাপ্রাপ্তি যে তাঁর সিদ্ধিলাভের অনুকূল ও সহায়ক হয়েছে তাও স্বীকার করেছেন। কথিত আছে, সাধক রামপ্রসাদ সেন ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কালীপুজোর পরদিন ভোরে গঙ্গায় কালীমাতার মূর্তি বিসর্জন দেওয়ার কালে গঙ্গাবক্ষে বিলীন হয়ে যান। কিন্তু তাঁর তিরোধানের সময়টি সঠিক নয়। কারণ নীচের উল্লেখিত দস্তখৎ প্রমাণ করে যে তিনি ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাস পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। ফলে তাঁর তিরোধান ঘটে ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে বা তার পরে। ১২০১ বঙ্গাব্দের, বৈশাখমাসে (ইং এপ্রিল,১৭৯৪) হালিশহরের সাবর্ণ রায় চৌধুরী বংশের এক কবুলতি পত্রে ইসাদী হিসাবে সাধক রামপ্রসাদ সেনের দস্তখৎ। সুতরাং ১৭৯৪-৯৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৭৪-৭৫ বছর বয়সের মধ্যে তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। উক্ত কবুলতি পত্র বড়িশায় সাবর্ণদের সংগ্রহশালাতে রয়েছে।

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comments

জগদ্ধাত্রী পুজার ইতিহাস

জগদ্ধাত্রী পুজার ইতিহাস জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উৎসব হলেও, দুর্গা বা কালী পূজার তুলনায় এই পূজার প্রচলন অপেক্ষ...