Monday, September 25, 2017

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ নামামৃত



শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ নামামৃত
শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম
{স্বামী বিবেকানন্দের প্রিয় শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী   (‘বাঙ্গাল”) প্রণীত}
জয় জয় রামকৃষ্ণ ব্রহ্মসনাতন।
জয় জয় নরদেহধারী ভূভারহরণ।।
পতিতপাবন তুমি ত্রিতাপদহন,
ব্রহ্মা বিষ্ণু হর তুমি- তুমি নিরঞ্জন।
কামিনী-কাঞ্চন ঘোর আঁধারে মগন।
হেরি ধরা-উদিলে হে তরুণতপন।।
ক্ষুদিরাম গৃহে আসি ধরি নর-কায়।
সর্বধর্ম সমন্বয় করিলে ধরায়।।
“যত মত- তত পথ” আপনি আচরি।
নাশিলে ধরম দ্বন্দ্ব-নব সঙ্ঘ গড়ি।।
জ্ঞান, ভক্তি যোগ কর্ম সমন্বয় করি,
অসম্ভব সম্ভব করিলে নরহরি।।
হেন লীলা কোন যুগে না হয় না হবে।
সময় আসিলে জীব অবশ্য বুঝিবে।।
গুনহীন ব্রহ্ম তুমি-তুমি ধর কায়।
ওঠে,ভাসে,নাশে, সৃষ্টি তোমার ইচ্ছায়।।
আমি কি বলিব প্রভো মহিমা তোমার।
বেদ বিধি নাহি জানে অগম্য অপার।।
নিজগুনে কর দেব! আমারে উদ্ধার।
কৃপা বিনে নাহি দেখি পথ তরিবার।।
স্বপ্নযোগে জানি তোমার দ্বিজ ক্ষুদিরাম।
শৈশবে রাখিল তব “গদাধর”(১) নাম।।
“গদাই”(২) বলিয়া ডাকে চন্দ্রা ঠাকুরানী
“দুলাল”(৩) রাখিল নাম ধনী কামারিণী।।



গয়াবিষ্ণু নাম রাখে ‘প্রানের সেঙ্গাত’(৪)।
চিণু শাঁখারীয়া নাম রাখে জগন্নাথ(৫)।।
হলধারী নাম রাখে ‘জগত- জননী’(৬)।
জটাধারী নাম রাখে ‘রাম-রঘুমনি’(৭)।।
ব্রাহ্মণী বলেন ইনি ‘চৈতন্যঅবতার’(৮)।
নিত্যানন্দ খোলে এবে আবির্ভাব তাঁর ।।
‘অমিয় সাগর’(৯) নাম মাস্টার রাখিল।
কথামৃত রসে যার জগত ভাসিল।।
গিরিশ রাখেন নাম ‘পতিত পাবন’(১০)
বীরভক্ত রামদত্ত বলে ‘জনার্দন’(১১)।।


নরেন্দ্র রাখেন নাম ‘স্বতন্ত্র ইশ্বর’(১২)।
কপাল মোচন(১৩) কভু ডাকে যতিবর।।
রাখাল রাখেন নাম ‘প্রেমের সাগর’(১৪)।
বৃন্দাবন লীলা স্মরি ভাবে গরগর।।
যোগীন্দ্র রাখেন নাম ‘দেব-দিগম্বর’(১৫)।
দেখিয়া অনাদি-লিঙ্গ গঙ্গার ওপর ।।
‘দরদী’(১৬) বলিয়া ডাকে ভক্ত বাবুরাম।
‘নিস্কলঙ্ক চন্দ্র’(১৭) বলি  কভু রাখে নাম।।
‘গুরু মহারাজ’(১৮) নামে ডাকে নিরঞ্জন।
শিবানন্দ নাম দেন ‘ব্রহ্ম সনাতন’(১৯)।।
সুবোধ রাখেন নাম ‘শ্যামা ক্ষেমঙ্করী(২০)।
লাটু মহারাজ বলে ‘ব্রহ্ম-অবতরি’(২১)।।
শশী মহারাজ বলে ‘বাঞ্ছা-কল্পতরু’(২২)।
কালী মহারাজ বলে ‘জগতের গুরু’(২৩)।।
শরত রাখেন নাম ‘জগতের মাতা’(২৪)।
গঙ্গাধর নাম রাখে ‘বিশ্বের বিধাতা’(২৫)।।
হরিরাজ রাখে নাম ‘প্রজ্ঞানন্দ-ঘন’(২৬)।
সারদা ডাকেন বলি ‘সগুণে নির্গুণ ‘(২৭)।।


‘কালের কামিনী’(২৮) বলি ডাকে কেনারাম
তন্ত্রপথে মন্ত্র যবে করিলা প্রদান।।
কালী দানা নাম রাখে কৈবল্যদায়িনী(২৯)
‘অন্তর্যামী’(৩০) নাম রাখে রাণী রাসমণি।।
দেখিয়া মথুর শিব শক্তি একাধারে,
‘বিশ্ব-পিতা-মাতা’(৩১) বলি ডাকে ভক্তিভরে।।
হাজরা রাখিল নাম ‘মায়া-অধীশ্বর’(৩২)
বুঝে না বুঝিল লীলা থেকে একত্তর।।
‘দর্পহারী ‘(৩৩) নাম দিলা বৈষ্ণবচরণ।
হৃদয় রাখিল নাম ‘বিপদ-ভঞ্জন’(৩৪)।।


‘নিস্তারিণী’(৩৫) নামে ডাকে সারদা জননী।
ভিন্ন দেহ ধরি যিনি অভিন্না সঙ্গিনী।।
‘ব্রহ্মশক্তি’(৩৬) বলি করে কেশব নির্ণয়
‘ষোলকলা পূর্ণ’(৩৭) কহে গোস্বামী বিজয়।।
‘দুলালী’(৩৮) বলিয়া ব্রজে ডাকে গঙ্গা মাঈ।
রাধা ভাবে উন্মত্ত হেরিয়ে গোঁসাঞি।।
শ্রীপদ্মলোচন বলে ‘গোলক-বিহারী’(৩৯)
শ্রীশম্ভু মল্লিক ডাকে ‘পারের কান্ডারী’(৪০)।।
চৈতন্য আসনে প্রভু যবে অধিষ্ঠান,
‘গৌরাঙ্গ’ (৪১) বলিয়া ডাকে বৈষ্ণব প্রধান।।
সুরেন্দ্র ‘সর্বজ্ঞ’(৪২) বলি ডাকে নিশিদিন,
মহেন্দ্র ডাক্তার বলে ‘ব্রহ্মানন্দে লীন’(৪৩)।।


শ্রীগৌরী পণ্ডিত দেখি বারুদ বরণা,
‘মহাকালী’ (৪৪) বলি উচ্চে করিল ঘোষণা।।
ওয়াজিদ বলে ইনি ‘পীর পেগম্বর’(৪৫)
কুক দেখে ‘খ্রিস্ট রূপ’ ক্রুশের ওপর।
‘আনানক’(৪৬) বলিয়া কহে সিপাহী কেয়ার
পওহারী বাবা বলে ‘ঈশ্বরাবতার’(৪৮)।।

গৌরী মাতা নাম দিল ‘অধমতারণ’(৪৯)
কভু বলে ‘গোপীনাথ- মদনমোহন’(৫০)।।
গোপালের মাতা কন ‘শ্রীবালগোপাল’(৫১)
ক্ষীর-সর-ননী হাতে ডাকে কত কাল।।
নব রসিকেরা বলে ‘অটুট গোঁসাই’(৫২)
‘আলেখ’(৫৩) বলিয়া ডাকে দরবেশ সাঁই।।
চন্দ্র বলে প্রভু তুমি ‘বিভুতির খনি’(৫৪)
প্রভুর পরশে যবে নিলে পৃষ্ঠমণি।।


অন্নাসন অনুষ্ঠানে ‘রামকৃষ্ণ’(৫৫) নাম।
কলিযুগ মহামন্ত্র রাখে ক্ষুদিরাম।।
তোতাপুরী নাম রাখে ‘শ্রীপরমহংস’(৫৬)
পরশে যাঁহার হবে মায়া-মোহ ধ্বংস।।
‘সর্বদেবদেবীস্বরূপ’(৫৭) সন্ন্যাসীরা কয়
দেখি নিজ নিজ ইষ্ট শ্রীঅঙ্গে বিলয়।।
উপেন্দ্র রাখেন নাম ‘দারিদ্র্যভঞ্জন’(৫৮)
বসুমতী ভবে যার বিজয় কেতন।।
‘নটনারায়ণ’(৫৯) নাম রাখে বিনোদিনী
রঙ্গমঞ্চে শ্রীপ্রভুরে সমাধিস্থ জানি।।

‘দীননাথ’(৬০) বলে ডাকে নাগ মহাশয়।
‘মূর্ত জগবন্ধু’(৬১) বলি বলরাম কয়।।
‘মুক্তিদাতা’(৬২) নামে ডাকে শ্রীমনমোহন।
পূর্ণ কহে ইনি ‘পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণ’(৬৩)।।
শ্রীবিদ্যাসাগর বলে ‘দয়ার সাগর’(৬৪)
‘সাধকের চুড়ামণি’ (৬৫) বলে শশধর।।
শ্রীপ্রভুর অঙ্গে অঙ্গে মহাভাব হেরি
ভগবানদাস কহে ইনি ‘রাধা-প্যারী’(৬৬)।।


ভুপতি বলেন ডাকি,ইনি ‘সরস্বতী’(৬৭)
ত্রিশুল-ডমরু কর,ভালে দিব্য জ্যোতি।।
অধর রাখেন নাম ‘জগত-জননী’(৬৮)
প্রবিষ্ট দেখিয়া ইষ্ট বরাভয়-পাণি।।
আনুড়ে ‘শীতলা’(৬৯) নাম রাখে যাত্রীগণ
শীতলার ভাবে যবে সমাধিস্থ হন।।
‘কল্পতরু’(৭০) হয়ে প্রভু কাশীপুর-উদ্যানে
স্বীয় ইষ্ট দেখাইলে ছুঁয়ে ভক্তগণে।।
শ্রীযোগীন মাতা বলে ‘চিদ্ঘনকায়’(৭১)
শিবনাথ বলে ইনি ‘পরশ-পাথর”(৭২)
দলভাঙ্গে বলি নাহি গেল অতঃপর।।
বৈকুণ্ঠ সান্যাল বলে ‘শিব-অবতার’(৭৩)
কোটি রামরুদ্র-বিধি স্ফুলিঙ্গ যাঁহার।।
হরিশ বলেন ইনি ‘কাঙ্গালের হরি’(৭৪)
দীনবন্ধু বলে ‘পর-ব্রহ্ম-অবতারী’(৭৫)।।
দেবীর সম্মুখে দেখি চামর ব্যজন
জগদম্বা ‘জয়া’(৭৬) বলি করে সম্ভাষণ ।।



চন্দ্রভাতি দেখি অঙ্গে শ্রীনবগোপাল
‘রাম রাম’(৭৭) বলিয়া কাটিয়ে গেলো কাল।।
সখিভাবে স্থিত শ্রীদেবেন মজুমদার
‘ত্রিভুবন-স্বামী’(৭৮) বলি করিল প্রচার।।
লছমী বাঈ বলে ইনি ‘ঊর্ধ্বরেতা যোগী’(৭৯)
লছমীনারায়ণ কহে ইনি ‘সর্বত্যাগী’(৮০)।।
তারক দেখেন প্রভু ‘মুক্ত-অষ্ট-পাশ’(৮১)
নবাই চৈতন্য বলে ‘গৌরাঙ্গ প্রকাশ’(৮২)।।
‘অঘটনঘটনাখ্যা’(৮৩) দিল রামলাল
মন্দিরে দেখিয়া দেবী বিকট করাল।।


কলিযুগে ‘আনন্দ-আসন-সিদ্ধ’ শুনি
শ্রীঅচলানন্দ বলে ‘কৌলরাট’(৮৪) ইনি।।
আম-নর-মাংস ভোজ্য যবে দিল আনি
‘প্রচন্ডচন্ডিকা’(৮৫) রূপ দেখিলা ব্রাহ্মণী।।
‘উক্তি’ শুনে সুরেশ কহিল বারবার
নরদেহে রামকৃষ্ণ ‘বিষ্ণু অবতার’(৮৬)।।
‘উত্তম পুরুষ’(৮৭) হেন দেখি নাহি আর
লিপিবদ্ধ করিল প্রতাপ মজুমদার।।
শ্রীকর-পরশে দৃষ্টি খুলিল যখন
‘সন্দেহ-ভঞ্জন”(৮৮) ঘোষে শ্রীহরমোহন।।
‘শান্তিদাতা’(৮৯) নাম দিলা গোলাপ ব্রাহ্মণী
নিরাশ্রয়া যবে কন্যাশোকে উন্মাদিনী।।


খানদানী ভক্তরাজ বলরাম-জায়া
‘গোবিন্দ’(৯০) বলিয়া ডাকে স্বরূপ চিনিয়া।।
অক্ষয় রাখিল নাম ‘করুণানিদান’(৯১)
রামকৃষ্ণ পুঁথি যার বিজয়-নিশান।।
দক্ষরাজ রাখে নাম ‘মহামহেশ্বর’(৯২)
সাধনার পথে যার বিঘ্ন বহুতর।।
ভক্তবীর পল্টু কহে তুমি ‘সারাৎসার’(৯৩)
নরেন্দ্র মিত্রজা কহে ‘বুদ্ধ অবতার’(৯৪)।


‘সদানন্দ’(৯৫) নাম রাখে আবদুল কিশোরী
‘চিন্তামণি’(৯৬) বলে মণি প্রভুরে নেহারি।
‘অর্ধনারীশ্বর’’(৯৭) রূপ অতুল দেখিলা
বলে গেল একদেহে রাধা কৃষ্ণ লীলা।।
স্থুল দেহে শূন্য পথে যান ঝাউতলা
‘ব্যোমচারী’(৯৮) বলি তেঁই হৃদয় ঘোষিলা।
ছায়া নাহি পড়ে যবে সাধনার কালে
‘ছায়াহীন দেবতনু’(৯৯) শ্রীব্রাহ্মণী বলে।।
পাপ পুরুষেরে শ্বাসে করি বহিষ্কার
‘নিষ্কম্প-প্রদীপ’(১০০) খ্যাতি রটিল তোমার।।

চিতাধুম পানে অঙ্গকান্তি আচ্ছাদিলে।
‘অনৈশ্বর্য’(১০১) বলি ভক্তে পরে জানাইলে।।
পদে বিদলিত দেখি নবদূর্বাদল
‘বিশ্বব্যাপী’(১০২) বলি তব চক্ষে বহে জল।।
পৃষ্ঠে ব্যথা ধরি দূর মাঝির আঘাতে
তুমি ‘নিমিত্তোপাদান’(১০৩) জানালে সঙ্কেতে।।
নীলকণ্ঠ কহে তুমি ‘সর্বসিদ্ধিদাতা’(১০৪)
অশ্রুসিক্ত বক্ষ যবে শুনি কৃষ্ণকথা।।
সতত ‘সমাধি মুখ’(১০৫) ভাবে কি অভাবে
কোটি জন্মে হেনস্থিতি জীবে না সম্ভবে।।
শ্রীমুখে অসত্য বাণী নহে কদাচন
সত্যের স্বরূপ তুমি- ‘সত্যনারায়ণ’(১০৬)।
জ্ঞানী কয় ভক্ত কয় তুমি ‘পূর্ণাদর্শ’(১০৭)
তব পদরজে পুত এ ভারতবর্ষ ।।


শ্রীমুখে কহিলে তুমি ‘পূর্ণ অবতার’(১০৮)
রাম রুদ্র বিধি বিষ্ণু কলাংশ যাঁহার ।
অবতার ভৃত্য যার সেই তো এবার

‘রামকৃষ্ণ’ দেহ ধরি-হরিলে ভুভার!

সাধন ভজনে তার নাহি প্রয়োজন
রামকৃষ্ণ পুণ্য নাম যে করে কীর্তন।
অভ্যুদয় শ্রেয়ো দুই লভে এ জীবনে
রামকৃষ্ণ ভজে যেই জীবনে মরণে।।
যেখানে যেখানে নামামৃত হয় গান

রামকৃষ্ণ স্বস্বরূপে তথা অধিষ্ঠান।।

নাহি জানি ধর্ম কর্ম না জানি সাধন
জানি মাত্র রামকৃষ্ণ জীবের জীবন।।
যুক্তি-তর্ক ন্যায় নিষ্ঠা বেদান্ত বিজ্ঞান
থাকো নিয়ে রুচি যার-যাগযজ্ঞ ধ্যান।।
আমার আরাধ্য শুধু রামকৃষ্ণ নাম।
নামে মুক্তি-নামে ভক্তি পূর্ণ মনস্কাম।।
রামকৃষ্ণপদ শিরে করিয়া করিয়া ধারণ,
সাঙ্গ হলো রামকৃষ্ণ নাম সংকীর্তন।।
জন্মে জন্মে স্বামীজীর চরণ কাঙ্গাল।
রামকৃষ্ণ নামামৃত রচিল “বাঙ্গাল”।।


ওম ভগবতে শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণায় নমঃ




3 comments:

  1. জয় ঠাকুর

    ReplyDelete
  2. সুজিত চন্দMarch 28, 2024 at 6:11 AM

    জয় ঠাকুর

    ReplyDelete
  3. অপুর্ব সৃষ্টি শরৎ মহারাজীর। কোটি কোটি দন্ডবৎ প্রণাম।

    ReplyDelete

Thanks for your comments

জগদ্ধাত্রী পুজার ইতিহাস

জগদ্ধাত্রী পুজার ইতিহাস জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উৎসব হলেও, দুর্গা বা কালী পূজার তুলনায় এই পূজার প্রচলন অপেক্ষ...