Thursday, September 28, 2017

কুমারী পূজা কি এবং কেন ???

কুমারী পূজা কি এবং কেন ???
ছোট বেলা থেকেই রামায়ন ও মহাভারতে আমরা অনেক বড় বড় যজ্ঞের কথা শুনে এসেছি। এই দুর্গোৎসবের একটি বড় অঙ্গ হচ্ছে কুমারী পূজা। কুমারী পূজা নিয়ে আমাদের মধ্যে যেন কৌতূহলের কমতি নেই।
ভারত ও বাংলাদেশের রামকৃষ্ণ মিশনসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে অষ্টমীর মহাতিথিতে এই কুমারী পূজা হয়ে থাকে। শাস্ত্রকাররা নারীকে সন্মান ও শ্রদ্ধা করতে এই পূজা করতে বলেছেন।আমাদের সনাতন ধর্মে নারীকে সন্মানের শ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হয়েছে। “নিজেদের পশুত্বকে সংযত রেখে নারীকে সন্মান জানাতে হবে”- এটাই কুমারী পূজার মূল লক্ষ্য। বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এ রামের জন্য ব্রহ্মার দুর্গাপূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। তখন শরৎকাল, দক্ষিণায়ণ। দেবতাদের নিদ্রার সময়। তাই, ব্রহ্মা স্তব করে দেবীকে জাগরিত করলেন। দেবী তখন কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বললেন, বিল্ববৃক্ষমূলে দুর্গার বোধন করতে। দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখলেন, এক দুর্গম স্থানে একটি বেলগাছের শাখায় সবুজ পাতার রাশির মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি তপ্তকাঞ্চন বর্ণা বালিকা। ব্রহ্মা বুঝলেন, এই বালিকাই জগজ্জননী দুর্গা। তিনি বোধন- স্তবে তাঁকে জাগরিত করলেন। ব্রহ্মার স্তবে জাগরিতা দেবী বালিকামূর্তি ত্যাগ
করে চণ্ডিকামূর্তি ধারন করলেন। তন্ত্রসার মতে, “১ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত; তাদের অবশ্যই ঋতুমতি হওয়া চলবে না।”
মেরুতন্ত্রে বলা আছে,
“সর্বকামনা সিদ্ধির জন্য ব্রাহ্মণ কন্যা,
যশোলাভের জন্য ক্ষত্রিয় কন্যা,
ধনলাভের জন্য বৈশ্য কন্যা ও
পুত্র লাভের জন্য শূদ্রকূল জাত কন্যা কুমারী পূজার জন্য যোগ্য।”
গুণ ও কর্ম অনুসারেই এই জাতি বা বর্ণ নির্ধারিত হয়। সেইজন্যই প্রচলিত শাস্ত্র অনুসারে, বিভিন্ন মিশন ও মন্দিরগুলোতে সর্ব মঙ্গলের জন্য ব্রাহ্মণ কন্যাকেই দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়। সকল নারীর মধ্যই বিরাজিত রয়েছে দেবীশক্তি। তবে কুমারী রূপেই মা দুর্গা বিশেষভাবে প্রকটিত হয়েছিলেন। তাই, কুমারী রূপে নারীকে দেবীজ্ঞানে সন্মান জানানোর একটি বাস্তব উদাহরন হচ্ছে “কুমারী পূজা”। ঈশ্বরের অনন্ত- ভাব। তাই যে কোনও ভাব অবলম্বন করে ঈশ্বরকে আরাধনা করা যায়। সেজন্য পূজারীরা অনš-ভাবের এক ভাব মাতৃরূপে ঈশ্বরকে আরাধনা করেন।
কুমারী পূজা মাতৃরূপে ইশ্বরেরই একটি আরাধনা।
মনু সংহিতায় আছে, ‘যত্র নার্যন্তু পূজ্য - রামতত্র দেবতাঃ/
যত্রৈতান্তু ন পূজ্যতে সর্বান্তুত্রাফল
াঃ ক্রিয়া’।
এর অর্থ হল, যেখানে নারীরা পূজিত হন সেখানে দেবতার প্রসন্ন। যেখানে নারীরা সম্মান পান না, সেখানে সব কাজই নিষ্ফল।
আবার মহাদেব যোগিনী শাস্ত্রে বলেছেন,
‘কুমারী পূজনং ফলং বক্তু নার্হামি সুন্দরী।/
জিহ্বাকোটি সহস্রৈস্তু বস্তুকোটি শতৈরপি’।
এর অর্থ শতকোটি জিহ্বায় কুমারী পূজার ফল ব্যক্ত করতে পারব না। কুমারীরা শুদ্ধতার প্রতীক হওয়ায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য কুমারীকন্যাকে নির্বাচন করা হয়। সাধারণত অষ্টমী বা নবমীতে কুমারী পূজা করা হয়। হিন্দু শাস্ত্রে ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী অজাতপুষ্পবালাকে কুমারী বলা হয়।
বয়স অনুযায়ী
১ বছর বয়সী কন্যাকে - সন্ধ্যা
২ বছর বয়সী কন্যাকে - স্বরসতী,
৩ বছর বয়সী কন্যাকে - কালিকা,
4 বছরের কন্যা - কালিকা
৫ বছর বয়সী কন্যাকে - সুভগা,
৬ বছর বয়সী কন্যাকে - উমা,
৭ বছর বয়সী কন্যাকে - মালিনী,
৮ বছর বয়সী কন্যাকে - কুব্জিকা,
৯ বছর বয়সী কন্যাকে - অপরাজিতা,
১০ বছর বয়সী কন্যাকে - কালসন্ধর্ভা,
১১ বছর বয়সী কন্যাকে - রুদ্রাণী,
১২ বছর বয়সী কন্যাকে - ভৈরবী,
১৩ বছর বয়সী কন্যাকে - মহালক্ষ্মী
১৪ বছর বয়সী কন্যাকে - পীঠনায়িকা,
১৫ বছর বয়সী কন্যাকে - ক্ষেত্রজ্ঞা এবং
১৬ বছর বয়সী কন্যাকে - অম্বিকা বলা হয়।
হিন্দুশাস্ত্রে এসব নাম জগত মাতার স্বরূপের এক একটি গুণ প্রকাশ করে। প্রায় সর্বজাতীয় কুমারী কন্যাকেই কুমারীরূপে পূজা করা যেতে পারে। তবে কুমারী পূজার জন্য সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছরের কুমারীকন্যাকে মনোনীত করা হয়।
জয় মা দুর্গা🌺 জয় শ্রীরামকৃষ্ণ🌺 জয় মা সারদা🌺 জয় কুমারী মাঈ






No comments:

Post a Comment

Thanks for your comments

জগদ্ধাত্রী পুজার ইতিহাস

জগদ্ধাত্রী পুজার ইতিহাস জগদ্ধাত্রী পূজা বাঙালি হিন্দু সমাজের একটি বিশিষ্ট উৎসব হলেও, দুর্গা বা কালী পূজার তুলনায় এই পূজার প্রচলন অপেক্ষ...